নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া:
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর এলাকায় ক্লু-হীন ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ (৩৬) হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রধান কিলার ঘাতক মিজানুর রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক (ম্যাজিষ্ট্রেট) রাজীব কুমার দেব এর কাছে (৮ ফেব্রুয়ারী) মঙ্গলবার লতিফ উল্লাহকে কিভাবে হত্যা করা হয় তা বর্ণনা দেন।
আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া প্রধান কিলার মিজান ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার বালকদিয়া বিনয় কাঠি ইউপি ৭নং ওয়ার্ডের মৃত জলিল আকনের ছেলে এবং নিহত ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সুফিপাড়া মরহুম ইলিয়াছ সওদাগরের ছেলে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি সাংবাদিকদের কাছে ৯ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) সন্ধ্যায় এসব তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের হাইস্কুল সংলগ্ন ব্যবস নিজ প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মোবাইল ব্যাংকিং এর আর্থিক লেনদেনের তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে ঘটনায় ব্যবহৃত দা ও মরিচের গুড়া কেনার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়।
ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সন্দেহে আসামী মিজানুর রহমানকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ পূর্বক ৩দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সহিত জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভিকটিমের (লতিফ) মোবাইল সেট, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা ও মরিচের গুড়া ক্রয়ের ভিডিও এবং তার পরনের পোষাকাদিও জব্দ করা হয়। একইভাবে আদালতে ১৬৪ ধারা মতে ধৃত আসামী মিজান স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেন। তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসেবে দোকানঘর মালিক আজিজুল হক মুন্সির ছেলে আশরাফুল ইসলাম আসিফের নাম উল্লেখ করেন। এর পরপরই পুলিশ আসিফকে গ্রেফতার করে।
ধৃত আসামীর স্বীকারোক্তি বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মুজিবুর রহমান জানান, দোকান ঘরের মালিকের ছেলে আসিফ ও নিহত লতিফ উল্লাহ একই জায়গায় বিকাশ ও ফ্ল্যাক্সিলোড ব্যবসা রয়েছে। লতিফের কাছে কাস্টমার বেশি যাওয়ায় সহ্য করতে পারেনি আসিফ। এর জন্য পরিকল্পনা করেন ব্যবসায়ী লতিফকে হত্যার। প্রধান কিলার হিসেবে ভাড়া করেন মিজানুর রহমানকে। আসিফের বাড়িতে বাসা ভাড়া থাকতেন মিজান। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায় হলেও চকরিয়া পৌরসভার নির্মানাধীন সড়কের কাজে কনক্রিট পাম্প অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। কন্ট্রাক অনুযায়ী ঘটনারদিন প্রধান কিলার মিজানকে ৭শত টাকা দেন দা ও মরিচের গুড়া ক্রয়ের জন্য। পরিকল্পনা মতে ২৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন দা এবং ১০ টাকার মরিচের গুড়া। একটি সুজুকি মটর সাইকেলে কয়েকজন ভাড়াটিয়া যুবককে দোকানের বাহিরে অপেক্ষমান রাখেন। পরিকল্পনামতে ব্যবসায়ী লতিফকে মোবাইল ফোনে বিকাশ লেনদেনের জন্য ডেকে এনে দুইটি বিকাশ নাম্বারে ৫৫হাজার টাকা নেন। পূর্বপরিকল্পনা মতে, বিকাশে পাঠানো টাকা না দিয়ে চলে যেতে চাইলে শুরু হয় তর্কবিকর্ত। এক পর্যায়ে নিহত লতিফ উল্লাহর চোখে মরিচের গুড়া নিক্ষেপ করলেও তাকে ঝাপটে ধরে। ওই সময় খুনি মিজান কোমড় থেকে দা বের করে প্রথমে মাথার বাম পাশে ও পরে ডান পাশে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করার পর ক্যাশে থাকা নগদ ১৬ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।