ইমাম খাইর, কক্সবাজার
উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পে সংলগ্ন ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসায় ৬ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
শনিবার (২৩ অক্টােবর) রাতে উখিয়া থানায় মামলাটি করেন ঘটনায় নিহত ৬ জনের একজন আজিজুল হকের পিতা নুরুল ইসলাম।
মামলার আজাহারে ২৫ জনের নাম উল্লেখ আছে। অজ্ঞাতানামা রয়েছে আরো ২০০-২৫০ আসামি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ৬ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ভোরে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে মাদ্রাসার ৩ শিক্ষক ও একজন ছাত্রসহ ছয় রোহিঙ্গা নিহত হন।
ঘটনার পর ক্যাম্প-১১ এর আবুল কালামের ছেলে মুজিবুর রহমানকে দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটারগান ও ৬ রাউন্ড তাজা গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সাঁড়াশি অভিযানে চালিয়ে এজাহারনামীয় ৫ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। মুজিবুরের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে উখিয়া থানায় মামলা করে।
গ্রেপ্তার বাকি ৯ আসামি হলেন- ক্যাম্প-৮ এর আবু তৈয়বের ছেলে দিলদার মাবুদ ওরফে পারভেজ (৩২), সৈয়দ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আয়ুব (৩৭), ক্যাম্প ৯ এর নুর বাশারের ছেলে ফেরদৌস আমিন (৪০), মৌলভী জাহিদ হোসেনের ছেলে আব্দুল মজিদ (২৪), ক্যাম্প ১৩ এর আলী আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৩৫), আবু সিদ্দিকের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুস ওরফে ফয়েজ (২৫), ক্যাম্প ১২ এর ইলিয়াছের ছেলে জাফর আলম (৪৫), ক্যাম্প ১০ এর ওমর মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ জাহিদ (৪০) ও মৃত নাজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আমিন (৪৮)।
সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতরা হলেন- রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১২, ব্লক-জে-৫ এর বাসিন্দা হাফেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ইদ্রীস (৩২), ক্যাম্প-৯ ব্লক-১৯ এর মৃত মুফতি হাবিবুল্লাহর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (২৪), ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এইচ -৫২ এর নুরুল ইসলামের ছেলে মাদ্রাসার ছাত্র আজিজুল হক (২২), একই ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবী আবুল হোসেনের ছেলে মো. আমীন (৩২)। ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২ এর মোহাম্মদ নবীর ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), এফডিএমএন ক্যাম্প-২৪-এর রহিম উল্লাহর ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক হামিদুল্লাহ (৫৫) নিহত হন। হামলাকারীদের সদস্য মুজিবুর নামের একজনকে দেশীয় লোডেড ওয়ান শ্যুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরিসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ক্যাম্প পাহারা শেষে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবী ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া’ মাদ্রাসায় ঘুমাতেন। শুক্রবার ভোরে ওই মসজিদে অতর্কিত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ৬ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসায় ট্রেনিং সেন্টার করতে চেয়েছিল একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। একইসঙ্গে ওই গ্রুপটিতে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যোগ দেওয়ারও চাপ দেয়। এ জন্য প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিতে আতংকে ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
‘আরসা’র নামধারী মৌলভী আবু বক্কর, মৌলভী নুর হোছন, খালেক, ফজলুল কবির, ইকবালসহ অনেকেই উখিয়ার বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পটি নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এর জের ধরেই মাদ্রাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর ক্যাম্প জুড়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা। কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রাত হলেই ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন না থাকায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। তবে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান না, দেন না কোনও অভিযোগ।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ২৩ দিনের মাথায় সশস্ত্র ও মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় শুক্রবার এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে নতুন ও পুরনো মিলে কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাস করছেন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা।
১৪ নম্বর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক মো. নাঈমুল হক জানান, নিহত ছয় জনের হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর হবে।